কোটা নিয়ে আন্দোলনকারী নেতাকে ছাত্রলীগের ‘জিজ্ঞাসাবাদ’

কোটা নিয়ে আন্দোলনকারী নেতাকে ছাত্রলীগের ‘জিজ্ঞাসাবাদ’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে যে সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন চলছে, তার এক নেতাকে ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ছাত্রলীগ।

রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিনকে ধরে মধুর ক্যান্টিনে নিয়ে যান ছাত্রলীগের নেতারা। প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলার পর তাকে ছাড়া হয়।

গত কয়েকটি রাজনৈতিক সরকারের আমলেই শেষ বছরে সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলন হয়ে আসছে। এই আন্দোলন প্রথম শুরু করেছিল জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের অনুসারীরা। শুরুর দিকে তারা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের দাবি জানাতো।

তবে পরে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ কোটা নিয়ে আন্দোলনে নামে। আর চলতি বছর তারা কোটা বাতিল না করে সংস্কারের দাবি জানাচ্ছে। তবে এই দাবি তুললেও আগের মতোই মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসে প্রশ্ন তুলছে আন্দোলনকারীরা।

বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ৩০ শতাংশ, পশ্চাদপদ জেলা ও নারীর জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদৃ নৃগোষ্ঠীর জন্য পাঁচ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ কোটা আছে। এর মধ্যে বারবার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোটার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসায় আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্য নিয়েও বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে।

গত ২১ মার্চ চট্টগ্রামের পটিয়ায় এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে। তবে কোটায় কাউকে পাওয়া না গেলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া হবে।

এরপরও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। আর ১৮ মার্চ ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত সড়ক ঝাড়ু দেয়ার জন্য সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা হাতে ঝাড়ু এবং গলায় শিক্ষা সনদ ঝুলিয়ে রাখে।

কর্মসূচি শুরুর আগে ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নিজামুল ইসলাম দিদার, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম ইহতেশাম, আইন বিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, স্কুলছাত্র বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদিন, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেনসহ কয়েকজন সেখানে যান।

ছাত্রলীগ নেতারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের জন্য তৈরি করা টি শার্ট পরিহিত লোক প্রশাসন বিভাগের বিন ইয়ামিনকে মধুর ক্যান্টিনে নিয়ে যান।

সেখানে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন এই আন্দোলনকারীকে নানা বিষয়ে জেরা করে।

এ সময় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন তুই তোকারি করেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ইয়ামিনকে জাকির বলেন, ‘এখানে তোর আসার উদ্দেশ্য কী?’

জবাবে ইয়ামিন বলেন, ‘আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না। আমি আমার বিশ্বাস থেকে এসেছি।’

এক পর্যায়ে ইয়ামিনকে মধুর ক্যান্টিন গোল ঘরের ভেতরে নিয়ে যান সোহাগ ও জাকির। সেখানে তাকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রায় এক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিন ইয়ামিনকে ছেড়ে দেন ছাত্রলীগ নেতারা।

বিষয়টি জানতে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তাকে (ইয়ামিন) ধরে নিয়ে আসা হয়নি। আমরা তার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। এ জন্য সে এসেছে।’

‘২৫ মার্চে ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার কর্মসূচি ঠিক না এটা বোঝাতে চেষ্টা করেছি।’

১৮ মার্চ এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, তাহলে আজ কর্মসূচির দিন কেন কথা বললেন-এমন প্রশ্নে জাকির বলেন, ‘তাদের কর্মসূচি তো জানা যায় না। আমরা ভেবেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরে তারা আর কর্মসূচি পালন করবে না।’

তবে সমন্বয়কারীকে ধরে নিয়ে গেলেও কর্মসূচি পালন করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। তারা রাজু ভাস্কর্য থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত সড়কে গলায় শিক্ষার ঝুলিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘আমরা আমাদের পূর্বঘোষিত গলায় সার্টিফিকেট ঝুলিয়ে ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করেছি।’

আন্দোলনের একজন সমন্বয়কারীকে ছাত্রলীগ কেন ধরে নিয়ে গেছে জানতে চাইলে মামুন বলেন, ‘ছাত্রলীগ আমাদেরকে তাড়াতাড়ি কর্মসূচি শেষ করতে বলেছে।’

কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে শূন্য পদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে সাধুবাদ জানান মামুন। তবে কোটা কমিয়ে আনার দাবি পূরণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কার এখন দেশের ১৫ কোটি মানুষের দাবি। এসডিজি পূরণে মেধাবীদের নেতৃত্ব দরকার। সেক্ষেত্রে কোটা সংস্কারের দাবি যুক্তিসংগত।’

গত ১৮ মার্চ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলা প্রত্যাহার ও কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়। সেখান থেকে আজকের কমসূচির ঘোষণা আসে।

আন্দোলনকারীরা ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। তাদের ৫ দফা দাবি হলো- কোটা সংস্কার করে ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা, কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদ গুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটার কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়া, চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাটমার্ক ও বয়সসীমা নির্ধারণ।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment